Skip to main content

ডাকাতিয়া নদী : কুমিল্লা


কুমিল্লা জেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদী এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে মিশে আছে। এটি কেবল একটি জলধারা নয়, বরং কুমিল্লার কৃষি, অর্থনীতি এবং ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী। মেঘনা নদীর এই শাখা নদীটি ত্রিপুরার পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার বুড়িচং, চান্দিনা, দেবিদ্বার, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট এবং বরুড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে প্রবাহিত।

নদীটির নামকরণের পেছনে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় ইতিহাস। স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী, এককালে এই নদীতে নাকি জলদস্যুদের আনাগোনা ছিল। তারা নৌকায় করে এসে নিরীহ মানুষের ধন-সম্পদ লুট করত। সেই ভয়াল স্মৃতি থেকেই এই নদীর নাম হয় ডাকাতিয়া।

একসময় ডাকাতিয়া নদী ছিল কুমিল্লার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। পাল তোলা নৌকা সারি সারি করে চলত, দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতেন পণ্য নিয়ে। ধান, পাট, সবজি বোঝাই নৌকা নদীর ঘাটে ভিড় করত, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখত। বর্ষাকালে ডাকাতিয়া ভরে উঠত পানিতে, আর সেই ভরা যৌবনে নদী তার দুই কূলের মানুষের জীবনধারণের অন্যতম উৎস হয়ে উঠত। জেলেরা মাছ ধরত, কৃষকরা সেচের জন্য ব্যবহার করত নদীর জল।

তবে সময়ের সাথে সাথে ডাকাতিয়া নদীর সেই জৌলুস কিছুটা ম্লান হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্প কারখানার বর্জ্য এবং মানুষের অসচেতনতার কারণে নদীটি আজ দূষণের শিকার। অনেক স্থানে নদীর পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা, যা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। শুকনো মৌসুমে অনেক স্থানে পানি শুকিয়ে যায়, যা কৃষি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

ডাকাতিয়া নদী শুধু কুমিল্লার একটি নদী নয়, এটি এই অঞ্চলের মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে কত জনপদ, কত গল্প, কত স্মৃতি। আজও কুমিল্লার মানুষ এই নদীর তীরে এসে প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধ রূপ দেখে শান্তি খুঁজে পায়।

এই ঐতিহ্যবাহী নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ডাকাতিয়া নদী তার আপন মহিমায় কুমিল্লার জীবনযাত্রাকে সচল রাখুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Comments

Popular posts from this blog

গোলাপি গোলাপ: হৃদয়ের ভাষা, প্রকৃতির কবিতা

  গোলাপ, ফুলের রাণী। আর এই রাণীর রূপে যখন মেলে স্নিগ্ধ গোলাপি আভা, তখন তা হয়ে ওঠে আরও মায়াবী, আরও আবেগপূর্ণ। গোলাপি গোলাপ শুধু একটি ফুল নয়, এটি যেন প্রকৃতির লেখা এক নীরব কবিতা, যা হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতিগুলোকে স্পর্শ করে যায়। এর প্রতিটি পাপড়ি যেন সৌন্দর্যের এক একটি অধ্যায়, যা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় আর মুগ্ধ করে তোলে আমাদের মনকে। গোলাপি গোলাপের বিভিন্ন শেড বিভিন্ন অর্থ বহন করে। হালকা গোলাপি যেখানে তারুণ্য, মাধুর্য আর নম্রতার প্রতীক, সেখানে গাঢ় গোলাপি প্রকাশ করে গভীর কৃতজ্ঞতা, আন্তরিকতা আর স্বীকৃতির ভাব। কোনো প্রিয় বন্ধুকে ধন্যবাদ জানাতে, নতুন সম্পর্কের শুভ সূচনা করতে অথবা কারো প্রতি আপনার মুগ্ধতা প্রকাশ করতে একটি গোলাপি গোলাপই যথেষ্ট। এর স্নিগ্ধ স্পর্শ আর মিষ্টি সুবাস যেন এক নীরব ভাষায় আপনার মনের কথা পৌঁছে দেয়। শুধু আবেগের প্রকাশ নয়, গোলাপি গোলাপ তার সৌন্দর্যের জন্যও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এর বিভিন্ন জাত আর আকারের ফুল বাগানকে দেয় এক মনোরম রূপ। ছোট ঝোপালো গোলাপ থেকে শুরু করে লম্বা লতানো গোলাপ, প্রতিটি প্রকারেরই নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে। ভোরের শিশিরে ভেজা গোলাপি পাপড়ি অথবা পড়ন্ত বিকালের আলোয় রা...

ছোট কালো জাম: গ্রীষ্মের রসালো উপহার

কালো জাম, গ্রীষ্মের প্রিয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ছোট্ট কালো ফলটি স্বাদে মিষ্টি, রসালো এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। কালো জামের রসালো গুণের জন্য ছোট বাচ্চাদের কাছে এটি খুবই প্রিয়। কালো জামের পুষ্টিগুণ কালো জাম বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে:  * ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।  * আয়রন: রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে।  * ফাইবার: হজম শক্ত করে।  * অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: শরীরকে মুক্ত র‌্যাডিকেলের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। কালো জামের স্বাস্থ্য উপকারিতা  * রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় কালো জাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।  * হজম শক্ত করে: কালো জামে থাকা ফাইবার হজম শক্ত করে এবং পেটের নানা সমস্যা দূর করে।  * ত্বকের যত্ন: কালো জাম ত্বকের জন্যও উপকারী। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং বলিরেখা দূর করে।  * হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কালো জামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কালো জাম কীভাবে খাওয়া যায়? কালো জাম খাওয়ার নানা উপায় আছে। আপনি এটি সরাসরি খেতে পা...