নদীটির নামকরণের পেছনে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় ইতিহাস। স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী, এককালে এই নদীতে নাকি জলদস্যুদের আনাগোনা ছিল। তারা নৌকায় করে এসে নিরীহ মানুষের ধন-সম্পদ লুট করত। সেই ভয়াল স্মৃতি থেকেই এই নদীর নাম হয় ডাকাতিয়া।
একসময় ডাকাতিয়া নদী ছিল কুমিল্লার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। পাল তোলা নৌকা সারি সারি করে চলত, দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতেন পণ্য নিয়ে। ধান, পাট, সবজি বোঝাই নৌকা নদীর ঘাটে ভিড় করত, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখত। বর্ষাকালে ডাকাতিয়া ভরে উঠত পানিতে, আর সেই ভরা যৌবনে নদী তার দুই কূলের মানুষের জীবনধারণের অন্যতম উৎস হয়ে উঠত। জেলেরা মাছ ধরত, কৃষকরা সেচের জন্য ব্যবহার করত নদীর জল।
তবে সময়ের সাথে সাথে ডাকাতিয়া নদীর সেই জৌলুস কিছুটা ম্লান হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্প কারখানার বর্জ্য এবং মানুষের অসচেতনতার কারণে নদীটি আজ দূষণের শিকার। অনেক স্থানে নদীর পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা, যা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। শুকনো মৌসুমে অনেক স্থানে পানি শুকিয়ে যায়, যা কৃষি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ডাকাতিয়া নদী শুধু কুমিল্লার একটি নদী নয়, এটি এই অঞ্চলের মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে কত জনপদ, কত গল্প, কত স্মৃতি। আজও কুমিল্লার মানুষ এই নদীর তীরে এসে প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধ রূপ দেখে শান্তি খুঁজে পায়।
এই ঐতিহ্যবাহী নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ডাকাতিয়া নদী তার আপন মহিমায় কুমিল্লার জীবনযাত্রাকে সচল রাখুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
Comments
Post a Comment